প্রিয় মা, বাবা, আংকেল, আন্টি, পরিবার : কালো জীবন মূল্যবান, আমাদের কাছেও।

Letters For Black Lives
Letters for Black Lives
5 min readJun 8, 2020

--

এই চিঠি ‘লেটার্স ফর ব্ল্যাক লাইভ্‌স্‌ (কালো মানুষের জন্য চিঠি)’ নামের উদ্যোগের প্রয়াসে লেখা খোলা চিঠির বাংলা সংস্করণ।এই সমবেত উদ্যোগ বিভিন্ন মাধ্যমে আলাপ, আলোচনা, সংকলন ও অনুবাদের কাজ করে যাতে সকলে তাদের সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে কালো মানুষদের প্রতি বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং #ব্ল্যাকলাইভ্স্‌ম্যাটার (#কালোজীবনমূল্যবান) আন্দোলনের জন্য সমর্থন গড়ে তুলতে পারেন। এই চিঠিটি এমন অজশ্র মানুষের সহযোগিতায় লেখা এবং অনুবাদ করা হয়েছে, যারা তাদের পরিবারের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল ভাবে এবং খোলা মনে আলোচনা করতে চান।

See the English version here.

প্রিয় আম্মা/মা, আব্বা/বাবা, চাচা/কাকা, খালা/মাসি, মামা, ফুপু/পিসি, দাদা/ঠাকুরদা, দাদি/ঠাকুমা, নানা/দাদু, নানি/দিদিমা, পরিবার:

আজ আমাদের কথা বলা জরুরী।

আমি কালো মানুষদের জন্য চিন্তিত। ওরা আমার জীবনের বড় অংশ : আমার বন্ধু, সহপাঠী, আর প্রতিবেশী। তারা আমার কাছে পরিবারের মত, আর আজ আমি তোমাদের সাথে তাদের জীবন নিয়ে কথা বলতে চাই।

কিছুদিন আগে, মিনেসোটায় একজন সাদা পুলিশকর্মী জর্জ ফ্লয়েড নামক একজন কালো ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। প্রায় ৯ মিনিট ধরে সেই পুলিশকর্মী জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর নিজের হাঁটু দিয়ে চাপ দিয়ে রেখেছিল। এই ৯ মিনিটের মধ্যে, জর্জ ফ্লয়েড শ্বাস নিতে পারছেন না বলে অনেক কাকুতি-মিনতি করেছেন কিন্তু জর্জের মিনতির কোন তোয়াক্কা না করে, সেই নির্মম পুলিশকর্মীকে তার দু’জন সহকর্মী সাহায্য করতে আসে। আরেকজন “মাং” জাতির পুলিশকর্মী কেবল প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। জর্জ ফ্লয়েড একা নন: এই বছরের মে মাসে পুলিশকর্মীরা ইন্ডিয়ানাতে ড্রিয়াসজন রীড এবং ফ্লোরিডাতে টোনি ম্যাকডেড নামক দু’জন কালো ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। মার্চ মাসে কেন্টাকিতে ব্রিওনা টেলারকে পুলিশের হাতে নিজের প্রাণ হারাতে হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে জর্জিয়াতে একজন প্রাক্তন গোয়েন্দাকর্মী ২৫ বছর বয়সী আহমুদ আরবেরিকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করে।

অবিশ্বাস্য ব্যাপার এই যে, পরিষ্কার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, অপরাধী-খুনী পুলিশকর্মীরা কোন শাস্তি পায়নি। এরকম অনেক হিংস্র ঘটনা সবসময় ঘটতে থাকে, যাদের কথা বা প্রমাণ খবরে উঠে আসে না।

এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতার সঙ্গে আমার প্রিয় কালো বন্ধুদের রোজ লড়াই করতে হয়।

তোমরা হয়তো ভাবো: আমরাও তো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। আমরা যদি কোনো সম্বল ছাড়া এই দেশে বর্ণবৈষম্যকে উপেক্ষা করে জীবন গড়ে তুলতে পারি, তাহলে ওরা কেন পারে না?

আজ আমি তোমাদের বলতে চাই আমি এই বিষয়টি কিভাবে দেখি। তোমাদের ভালোবাসি বলেই আমি মনে করি যে আমাদের, এমনকি আমাকেও, আরো অনেক সচেতন আর সংবেদনশীল হতে হবে ।

একথা নিঃসন্দেহে ঠিক, যে এদেশে আমরাও জাতি বৈষম্যের শিকার হই। লোকেরা আমাদের ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে দুর্ব্যবহার করে, অথবা আমরা চাকরির জায়গায় উন্নতি থেকে বঞ্চিত হই কারণ আমরা নাকি নেতৃত্বের জন্য মানানসই নই। কখনো কখনো আমাদের সন্ত্রাসবাদী (‘টেররিস্ট’) বলা হয়। কিন্তু এরপরও, এদেশের রাস্তায় আমরা যখন হাঁটি, কেউ আমাদের বিপজ্জনক অপরাধী হিসেবে দেখে না। পুলিশ আমাদের সন্তানদের কেবল বেঁচে থাকার অপরাধে গুলি করে মারে না। পুলিশের হাতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আতঙ্কিত করে তোলে না।

কিন্তু আমার কালো বন্ধুদের এতটুকু স্বাধীনতাও মেলে না।

লক্ষ লক্ষ কালো মানুষকে এই দেশে তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, ক্রীতদাস করে আনা হয়েছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী, তাঁদের সমাজ, পরিবার আর শরীরের ওপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে, কেবল ধনী সাদা মানুষের লাভের জন্য। দাসত্ব বেআইনি ঘোষণা হওয়ার পরেও, এই দেশের সরকার তাঁদের নিজেদের জীবন গড়ে তোলার স্বাধীনতা দেয়নি — তাঁদেরকে ভোট, শিক্ষা, বাড়ি কেনার, ব্যবসা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে । এই অসমতা বজায় রাখার দায়িত্ব এখন পুলিশের। এই দেশের পুলিশি আইনের উৎপত্তিই হয়েছিল পলাতক ক্রীতদাসদের গ্রেফতার করার জন্য। তখন তাদের নাম ছিল “ওয়াইট স্লেভ প্যাট্রোল “। কালো মানুষদের ওপর নির্যাতন আজও চলছে। তাঁদের ওপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি, অত্যাচারের শুধু রূপ পাল্টেছে।

কালো মানুষেরা এতো বৈষম্যের মুখেও এগিয়ে চলেছেন। তাঁদের লড়াইয়ের জন্যই আমরা এই দেশে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারি। এই লড়াইয়ের জন্য তাঁদেরকে পুলিশের মার খেতে হয়েছে, গ্রেফতার হতে হয়েছে, এমনকি, পুলিশের হাতে প্রাণও হারাতে হয়েছে। তাঁদের লড়াইয়ের কারণেই আজ এই দেশে অভিবাসন আইনের উন্নতি হয়েছে, বর্ণ বিভেদ বন্ধ হয়েছে। আমাদেরকে “মডেল মাইনোরিটি” বলা হয় ঠিকই কিন্তু এটাও কালো মানুষদের আর আমাদের মাঝে দেওয়াল গড়ার প্রচেষ্টা

এত বছর পরেও, আমাদের সরকার এখনও কালো আমেরিকানদের হত্যা করছে এবং একের পর এক পুলিশকর্মী রেহাই পেয়ে যাচ্ছে।

আমি বুঝি যে চারপাশের লুটপাট আর দাঙ্গা দেখে তোমরা চিন্তিত আর ভীত। কিন্তু ভাবো, মানুষ কতটা কষ্ট পেলে দেশ জুড়ে কোরোনাভাইরাস মহামারীকে উপেক্ষা করে এমন ভাবে প্রতিবাদ করতে বেরিয়ে আসে। এর পরেও তাঁরা দেখে যে লোকে ভাঙা কাঁচ, ভাঙা দোকান নিয়ে চিন্তিত কিন্তু কালো মানুষদের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়। একশো বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা নিজেদের স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার পেতে যেই লড়াই করে গেছেন, সেই লড়াই তাঁরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আজও লড়ে যাচ্ছেন। তোমাদের মধ্যে অনেকেই পঞ্চাশ বছর আগে নিজেদের স্বাধীনতা এবং ভাষার জন্য নির্ভয়ে লড়াই করেছো। তাঁদের জায়গায় তোমরা হলে হতাশ হতে না? আমাদের ওঁদের সমর্থন করা উচিত।

সেই কারণেই আমি “ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার” আন্দোলনকে সমর্থন করি। কারণ কালো জীবন আমার কাছে মূল্যবান।

যদি আমি দেখি যে আমার সমাজের লোক, এমনকি আমার নিজের পরিবারের লোক এমন কিছু বলছেন বা করছেন যার দ্বারা কালো মানুষদের অসম্মান করা হয়, আমি অবশ্যই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো। আমাদের সম্প্রদায়ের মুসলিম-বিরোধী, জাতিবাদী, বর্ণবাদী, ধর্মবাদী চিন্তাভাবনাকেও আমি ধিক্কার জানাই, যা আমার সমর্থনেরই অংশ। এইসব বিশ্বাস প্রতিনিয়তই আমাদের কালো মানুষদের প্রতি অসংবেদনশীল করে তোলে। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের কালো মানুষদের নিচু হিসেবে দেখতে শিখায়। বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার অনেক দেশেই যাদের গায়ের রং কালো তাদেরকে অসম্মান ও অপমান করা হয়। নিজেদের এসব ত্রূটিস্বীকার করে আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে ।

যদিও আমাদের কুসংস্কার আর চিন্তাধারা বদলাতে সময় লাগবে কিন্তু আমরা রুহেল ইসলাম আর রাহুল দুবের মতো মানুষদের থেকে অনুপ্রেণা নিতে পারি, সংহতি শিখতে পারি। রুহেল ইসলাম মিনিয়াপোলিসের “গান্ধী মহল” রেস্টুরেন্টের মালিক। প্রতিবাদীরা যখন তাঁর দোকান পুড়িয়ে দেয়, তখন উনি বলেছিলেন, “আমার দোকান পুড়ে যাক, আমার বিল্ডিং আবার বানানো যাবে , কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের জীবন ফিরিয়ে আনা যাবে না।”

ওয়াশিংটন ডিসি তে পুলিশের গ্রেফতার আর অত্যাচারের হাত থেকে প্রতিবাদীদের বাঁচাতে রাহুল দুবে অন্তত ৭০ জন প্রতিবাদীদের নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন। ইসলাম আর দুবের মতো আরো অনেক দক্ষিণ-এশীয় মানুষ গত একশো বছর ধরে কালো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। সবশ্রেনী,ধর্ম ও বর্ণের এই বন্ধুত্বের ঐতিহ্যকে আমাদের বজায় রাখতেই হবে।

আমি জানি যে এই দেশটি সর্বদা তোমাদের প্রতি সদয় হয়নি। তা সত্বেও, এই দেশে তোমরা সব সহ্য করে যেই সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছো, তার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। এ দেশে দারিদ্র্য, রোগ, সন্ত্রাসবাদ এবং কুকর্ম ছড়ানোর জন্য আমাদের যে বারবার দোষারোপ করা হয়েছে তা উপেক্ষা করে তোমরা এই দেশের বর্ণবাদী ভাবনাচিন্তার সাথে লড়াই করেছো, যাতে আমি আরও ভাল জীবন পেতে পারি।

জাতিবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই তোমাদের, আমার বা কালো মানুষদের একার নয়। আমরা সবাই এই লড়াইয়ের অংশ। এই দেশে আমাদের কালো বন্ধুদের জীবন সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিরাপদ বোধ করতে পারব না। আমাদের স্বপ্ন হলো এমন এক পৃথিবী গড়ে তোলা, যেখানে আমরা সকলে নির্ভয়ে বাঁচতে পারি। এটিই আমার স্বপ্নের ভবিষ্যৎ, আশা করি তোমাদেরও ।

ভালোবাসা এবং প্রত্যাশায়,

তোমাদের সন্তানেরা

. . .

এই চিঠি ‘লেটার্স ফর ব্ল্যাক লাইভ্‌স্‌ (কালো মানুষের জন্য চিঠি)’ নামের উদ্যোগের প্রয়াসে লেখা খোলা চিঠির বাংলা সংস্করণ।এই সমবেত উদ্যোগ বিভিন্ন মাধ্যমে আলাপ আলোচনা সংকলন ও অনুবাদের কাজ করে যাতে সকলে তাদের সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে কালো মানুষদের প্রতি বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং #ব্ল্যাকলাইভ্স্‌ম্যাটার (#কালোজীবনমূল্যবান) আন্দোলনের জন্য সমর্থন গড়ে তুলতে পারেন। এই চিঠিটি এমন অজশ্র মানুষের সহযোগিতায় লেখা এবং অনুবাদ করা হয়েছে, যারা তাদের পরিবারের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল ভাবে এবং খোলা মনে আলোচনা করতে চান।

RESOURCES

Translators

  • Naima Akther — Translator
  • Rifat Mursalin — Translator
  • Fahmida Jahan Anika -Translator
  • Samira Siddique — Translator
  • S. Akila Ally — Translator
  • Tonuza Ahmed — Translator
  • Atika Nusrat — Translator
  • Bedatri D. Choudhury — Translator

--

--